বিআইডিএস ব্লগ বিস্তারিত

আধুনিক যুগে প্রশিক্ষণের গুরুত্ব

 14 Jul 2022

প্রশিক্ষণ যত হবে সুকঠিন শাণিত, দক্ষতা তত হবে পরীক্ষিত উন্নত। যে ধারণার উপর সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালিত হওয়া উচিত তা তুলে ধরা হলো। কার্যকর প্রশিক্ষণ ব্যতিরেকে পেশার উৎকর্ষতা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্ভব নয়। প্রশিক্ষণ কাঙ্খিত সফলতার অন্যতম চাবিকাঠি। ব্যক্তি মানুষের ব্যবহার ও আচরণ সৃষ্টিতে প্রক্ষিণের কোনো বিকল্প নেই। একজন শিশু তার পারিবারিক পরিম-লে ভাষা হতে শুরু করে যাবতীয় আচরণগত বৈশিষ্ট্য রপ্ত করে শুধুমাত্র অনুসরণগত শিক্ষনের মাধ্যমে। এরপর ওই শিশুকে উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজন হয়। কিন্তু শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাই তাকে কর্মক্ষম করে গড়ে তোলার জন্য যথেষ্ট নয়। বিষয় ও প্রযুক্তিভিত্তিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষিত একজন মানুষকে দক্ষ মানুষে পরিণত করা হয়। এভাবেই উন্নত সমাজ ও সভ্যতা ব্যাপ্তি লাভ করে। প্রশিক্ষণের গুরুত্ব অপরিসীম।

কাজেই কাউকে একদিনের খাবার হিসেবে প্রোটিন না দিয়ে,  প্রোটিনযুক্ত খাবার কিভাবে প্রস্তুত করতে হয় সেটা শিখিয়ে দেওয়াটাই জরুরি।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এক সাফল্যজনক উন্নয়ন ধারা অতিক্রম করছে। এ কর্মধারার মূল ভিত্তি সাম্প্রতিক অর্জনসমূহ। এর চালিকাশক্তি এক বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠী। দেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক এই তরুণ জনগোষ্ঠীকে দেশে সকল চলমান অর্থনৈতিক কর্মক্ষেত্রের দক্ষ চালিকাশক্তি হিসেবে প্রস্তুত করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। অমিত সম্ভবনার এ তারুণ্যকে সচেতন এবং দক্ষতায় অভিষিক্ত করা আগামী বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রকৃত যাত্রাপথ। মানুষ মূলত শান্তিকামী। মানুষের জন্য একটি নিরাপদ এবং মানসম্মত শান্তিময় জীবন অর্জনের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে বাংলাদেশে বিভিন্ন সংস্থার সংগঠন ও বিভাগের হাজার হাজার লাখ লাখ কর্মীগোষ্ঠী কর্মে নিয়োজিত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে। তাই একটি দক্ষ জনগোষ্ঠীর জন্য প্রশিক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। প্রশিক্ষণ একটি চলমান ব্যবস্থা বা প্রক্রিয়া যার দ্বারা জ্ঞান, দক্ষতা, অনুভূতি ও আচরণগত ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটানো হয়। প্রশিক্ষণের মূল লক্ষ্য হচ্ছে প্রশিক্ষণার্থীর জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গিতে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটানো, তার কাজ সর্বোত্তমভাবে সম্পাদনে তাকে প্রস্তুত করা ও তার নিকট থেকে সবচেয়ে বেশি ফল অর্জন করা। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা বিনিয়োগ ও জেন্ডার নিরপেক্ষ পরিবেশ সৃষ্টি করা। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে একটি প্রশিক্ষিত ও দক্ষ শ্রমশক্তি গড়ে উঠতে সক্ষম হয়। এছাড়া প্রশিক্ষণ নিষ্ঠাবান, পেশাদারিত্ব ও শৃঙ্খলার মান উন্নয়নে সহায়তা করে থাকে।  প্রশিক্ষণকে সফল, সুন্দর ও সার্থক করতে হলে প্রশিক্ষণ কর্তৃপক্ষকে কিছু প্রশাসনিক কার্যক্রম গ্রহণে মনোযোগী ও যতœবান হতে হয়। যেমন সুষ্ঠু প্রশিক্ষণের জন্য অংশগ্রহণকারী সকল সদস্য-সদস্যার আবাসন ও রান্না সামগ্রীর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হয়। সকল প্রশিক্ষণের জন্য মাঠ ও ক্লাস রুমের ব্যবস্থা করতে হয়। যে সংগঠন ও সংস্থার জন্য প্রশিক্ষণ প্রয়োজন তাকে সেই সংগঠন বা সংস্থার উপযোগী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। যেকোনো প্রশিক্ষণের সফলতার জন্য প্রশিক্ষণার্থী বাছাইয়ের সতর্কতা ও জবাবদিহিতা একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। অধিকন্তু  প্রশিক্ষণ কর্তৃপক্ষকে আরও কয়েকটি বিষয়ের উপরে অগ্রাধিকার প্রদান করে কার্যক্রম গ্রহণ করতে হয়। যেমন উপযুক্ত স্থান নির্বাচন, আবাসিক প্রশিক্ষণের জন্য সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব বন্টন, সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব বন্টন করে কেন্দ্র বা শিবির আদেশ জারি করতে হয়। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ও প্রশিক্ষণার্থীদের বাহিরে গমাগমন নিয়ন্ত্রণ করাও জরুরি। স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ ও প্রচারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা আবশ্যক। এ সকল প্রশাসনিক কার্যক্রমে অনেক প্রতিষ্ঠানে তাদের দক্ষতা ও যোগ্যতা প্রতিফলন ঘটাতে সক্ষম হন না। সর্বোপরি প্রশিক্ষণ প্রতিবেদন ও ফিডব্যাক প্রশিক্ষণের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। প্রণীত কোর্সের উপযুক্ত প্রতিবেদন প্রণয়ন ও তার সংরক্ষণ সংগঠনের স্বার্থে অতীব জরুরি। এই প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে পরবর্তী বছরে প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা প্রণয়ন করা সহজতর হয়ে থাকে। কোর্স প্রতিবেদন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হয়। যার ভিত্তিতে একজন প্রশিক্ষণার্থী তার কর্মক্ষেত্রে তার পদোন্নতি ও সামগ্রিক কর্মকান্ডের মূল্যায়ন সম্ভব হয়ে থাকে। বাস্তব ব্যবহারিক ও কার্যকর প্রশিক্ষণ ব্যতিরেকে পেশার  উৎকর্ষতা ও দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন সম্ভব নয়। যথাযথ প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে কাঙ্খিত সমস্যা চিহ্নিতকরণ করে তার সমাধানের পথে যেতে হবে। সমস্যার সুষ্ঠু চিহ্নিতকরণ হলে কাঙ্খিত সফলতা সম্ভব হয়। তাই বলা যায় যে, সঠিক ও সুষ্ঠু প্রশিক্ষণ একটি প্রতিষ্ঠানের গুণগত অবয়বের পরিবর্তনের এবং সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণের সফল হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। আমাদের দেশের বাস্তবতা হচ্ছে এই যে, আমরা সময়ের চাহিদা নিরুপণে ব্যর্থ হই। আর এই ব্যর্থতার কারণে প্রশিক্ষণকে কার্যকর ও ফলপ্রসু করা যাচ্ছে না। প্রশিক্ষণের প্রতি অনীহা এবং আস্থার ঘাটতির ফলে কোনো প্রশিক্ষণ থেকেই আশানুরূপ ফল লাভ করা যাচ্ছে না। তাই সকল বিভাগ ও সংগঠনের কর্তৃপক্ষকে প্রশিক্ষণের বিষয় নির্বাচনের সাথে সাথে তাদের উৎসাহ, আগ্রহ ও প্রশিক্ষণের প্রতি অনুরাগ সৃষ্টিমূলক সহযোগী বিষয় নির্বাচন করে প্রশিক্ষণের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে পাশাপাশি অন্যান্য কিছু বিষয় যেমন প্রতিটি কোর্স কার্যক্রমের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রতিটি কোর্স কার্যক্রমের উদ্ভাবনী বিষয়ের অন্তর্ভূক্তির বিষয়ে চিন্তা করতে হবে। প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের আওতাভূক্ত কোনো নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণকে কোর্সের নির্ধারিত ছক, রীতিনীতি, কৌশল, পরিচালনা পদ্ধতি, মনিটরিং এবং মূল্যায়ন সমেত তার দুর্বল ও বলিষ্ঠ দিকগুলিকে চিহ্নিত করে কোর্স কারিকুলাম ও সিলেবাস প্রণয়ন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে একটি কোর্সকে বিভিন্ন ধাপে ভাগ করে একটি প্যাকেজ ভিত্তিক পরিকল্পনা পত্র তৈরি করা আবশ্যক। যেমন প্রশিক্ষণের প্রস্তুতি পর্ব, সম্পাদন পর্ব, মনিটরিং বা তত্ত্বাবধান পর্ব এবং মূল্যায়ন পর্বে ভাগ করে কোর্সকে একটি সমন্বিত ধারণাপত্রের ভিত্তিতে সাজাতে হবে। অধিকন্ত কোর্সের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী, মানসম্মত প্রশিক্ষক অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন চাহিদা, প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য প্রণোদনামূলক উপকরণাদি বিতরণ ইত্যাদি যাবতীয় বিষয়াবলীকে বিবেচনায় রেখে একটি কোর্সের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। আর তা হলেই কোন প্রশিক্ষণ বা কোনো কোর্স সফলভাবে পরিসমাপ্তি লাভ করতে পারে। উন্নত দেশগুলোর মতো আধুনিক ও প্রযুক্তি নির্ভর সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে আমাদের দেশেও ইতিবাচক, ফলপ্রসু ও কার্যকর প্রশিক্ষণকে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। অন্যথায় আমাদের উন্নয়ন হবে সুদূর পরাহত। বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠন মুখ থুবড়ে পরা নামধারী সংস্থা হিসেবে অসহায়ত্ব নিয়ে দায়সারা ভাবে টিকে না থেকে আজ আমাদের সকলকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত হয়ে ও দক্ষতা অর্জন করে সক্ষমতা ও সামর্থ্যরে অধিকারী হতে হবে। আমাদের সকলকেই সুষ্ঠু, সুন্দর ও সফল প্রশিক্ষণের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে সফল ও বলিষ্ঠ জাতি গঠনে সচেষ্ট হওয়া আবশ্যক। প্রশিক্ষণ সেই বিশ্বাসের জায়গাটি তৈরি করে দিতে পারে। প্রশিক্ষণ আমাদের হতদরিদ্র অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দিয়ে থাকে। আসুন আমরা সেই সুযোগের সদ্বব্যবহার করে সক্ষম, সামর্থ্যবান, স্বনির্ভর পরিপূর্ণ মানুষে পরিণত হওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করি।

সর্বশেষ বিআইডিএস ব্লগ