ড. এম মোশাররফ হোসেন: আপনি সঠিক কথাই বলেছেন। বীমার প্রতি সাধারণ জনগণের আস্থার সংকট এ শিল্পের সবচেয়ে বড় সমস্যা। বীমা গ্রাহকদের প্রাপ্য দাবির অর্থ যথাসময়ে এবং যথাযথভাবে পরিশোধ না করার কারণে গ্রাহকদের মধ্যে আস্থার সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। ফলশ্রুতিতে বীমা আর্থিক খাতের অন্যান্য মাধ্যমের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে। বীমাখাতের আস্থার সংকট নিরসণ করার লক্ষ্যে আইডিআরএ বহুবিধ ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে হলো- ক) বীমাগ্রাহকদের যে সকল অভিযোগ বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষে জমা হয় সে গুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য একজন সদস্যের নেতৃত্বে একটি সেল গঠন করা হয়েছে এবং পাঁচজন কর্মকর্তা এ বিষয়টি সার্বক্ষণিক তদারকি করছে। খ) বীমা করলে টাকা পাওয়া যায় না এমন একটি ধারণা সমাজে বদ্ধমূল ছিল। বীমার প্রতি যাতে গ্রাহকদের আস্থা বৃদ্ধি পায় এবং কোম্পানিগুলো বীমার টাকা পরিশোধ করে এমন ধারণা সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, সদস্য, কর্মকর্তারা সরাসরি উপস্থিত থেকে জনসম্মুখে সভা করে কোম্পানিগুলোর বীমা দাবির অর্থ প্রদান করা হচ্ছে। বিগত ৩ বছরে প্রায় ৪,০০০ কোটি টাকার বীমা দাবি এ প্রক্রিয়ায় দেওয়া হয়েছে। এতে করে বীমা করলে সহজে টাকা পাওয়া যায় এ ধরণের একটি ইতিবাচক ধারণা সমাজে ধীরে ধীরে তৈরি হচ্ছে। গ) বীমাকারীর ওয়েবসাইটে দাবি সংক্রান্ত তথ্যসহ বীমা পণ্য সম্পর্কিত ভিডিও ক্লিপ তৈরি করে আপালোড করার নির্দেশনার প্রেক্ষিতে প্রতিটি কোম্পানি জনসচেতনতামূলক ভিডিও ক্লিপ তৈরি করে সেগুলো আপলোড করছে। বীমা বিষয়ে অভিযোগ দ্রুত নিষ্পত্তিতে হট লাইন/শর্ট কোড গ্রহণ: বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বীমা দাবি নিষ্পত্তি বা বীমা বিষয়ে যে কোন অভিযোগ দ্রুত নিষ্পত্তিতে হট নম্বর/শর্ট কোর্ড গ্রহণ করা প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিঃ এর শর্ট কোর্ড অর্থাৎ হট লাইন নম্বরটি বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ প্রাপ্ত হলে বীমা সংক্রান্ত অভিযোগসহ সকল অভিযোগ নিষ্পত্তিতে একটি যুগান্তকারী সূচনা হবে বলে আমরা মনে করে।
তাছাড়া বিগত বছরগুলোতে কর্তৃপক্ষের গৃহীত পদক্ষেপ ও নিরলস পরিশ্রমের ফলে বীমা দাবি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৯ সালে নিরীক্ষিত হিসাব মতে লাইফ ও নন-লাইফ সেক্টরে মোট বীমা দাবির পরিমাণ ছিল ৯৮,২৮৫.৭৭ মিলিয়ন টাকা যার মধ্যে ৭৯.৭৭% বা ৭৮,৪০৪.১৭ মিলিয়ন টাকার বীমা দাবি পরিশোধ করা হয়েছে। ২০২০ এর অনিরীক্ষিত হিসাব মতে ১,০৭,১৬২.৭৭ মিলিয়ন টাকা বীমা দাবির মধ্যে ৭২.৯৮% পরিশোধ করা হয়েছে যার পরিমাণ ৭৮,২০৭.৭৭ মিলিয়ন টাকা।